দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮৬তম জন্মদিন নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে। অযত্ন আর অবহেলায় চার বছর ধরে লেখকের সমাধীস্থল দেখে সবাই ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন। সমাবেশে বক্তব্যে বক্তারা দ্রুততম সময়ে সমাধিস্থলে কমপ্লেক্স নির্মাণের পাশাপাশি কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘সৈয়দ শামসুল হক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস সংলগ্ন কবির সমাধিতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। পরে কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর বই মেলার আয়োজন থাকলেও এ বছর উত্তরবঙ্গ যাদুঘরের উদ্যোগে সমাধিস্থলে লেখকের বিভিন্ন স্মৃতি নিয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। দিনব্যাপী এ ছবিগুলো দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল মান্নান, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দিন, কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন, কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুর বখত, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ।
এদিকে চার বছর পেরিয়ে গেলেও সৈয়দ শামসুল হকের নামে স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ আটকে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন লেখকের সহধর্মীনি আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি কমপ্লেক্সের কাজ দেখে যেতে চান বলে এক বার্তায় সাংবাদিকদের অবগত করেন। কবির ছোট ভাই অ্যাডভোকেট সৈয়দ আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনসহ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে কোন সুখবর মেলেনি। হবে হচ্ছে এ পর্যন্তই।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ওনার যে নকশা ও কাগজগুলো আছে সেগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ওনার একান্ত সচিব বরাবর প্রেরণ করছি। ওয়াটসএ্যাপে দিয়েছি। এটি একটি কমপ্লেক্স হবে। গবেষণাগার হবে। নাট্যশালা হবে। লাইব্রেরি থাকবে এবং সকল কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটবে।
কুড়িগ্রাম আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘সৈয়দ শামসুল হক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ ঘোষণার দাবি এখন কুড়িগ্রামবাসীর। দেশবরেণ্য কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে কবির সমাধি হয়। তৎকালীন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাকে সমাহিত করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা ছিল এ সমাধিকে ঘিরে কমপ্লেক্স তৈরি হবে দ্রুততম সময়ে। কিন্তু গত চার বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এটা হতাশার বিষয়। খুব কষ্টের ব্যাপার। কেন হচ্ছেনা তা জানতে চায় কুড়িগ্রামবাসী তখা সৈয়দ হকের গুণমুগ্ধ সবাই। কমপ্লেক্সের নকশা সংস্কৃত মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে আছে। আমরা মনে করি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং কবির প্রতি শ্রদ্ধা ও যথাযথ সম্মান জানাতে দ্রুততম সময়ে এ কমপ্লেক্সটি বাস্তবায়ন করা উচিত।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, এবারও কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসবে তার ভক্ত সমর্থকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিভিন্ন সংগঠন বের করে শোভাযাত্রা। কিন্তু তারা ফিরে যাবে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রয়োজনীয় ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে যথাযথ প্রক্রিয়ায়। সরকার কিংবা স্থানীয় প্রশাসন কোন উদ্যোগ না নিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই সমাধিস্থল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।
কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান বাবু বলেন, গত বছর কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বই মেলার আয়োজন ছিল। এবার সেটিও করা সম্ভব হয়নি করোনা পরিস্থিতির কারণে। কিন্তু সরকার প্রধানের সম্মতি থাকার পরও কেন সৈয়দ হকের সমাধীস্থলে কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কারোরই বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আবারও আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক আব্দুল খালেক ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুড়িগ্রামে সৈয়দ হকের নামে বিশ্ববিদ্যালয় চাই। মৃত্যু ও জন্মদিন এলে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সব্যসাচী লেখককে সম্মান জানাতে তার আদর্শকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে যে কাজ তা করা হচ্ছে না। কেন করা হচ্ছে না? লেখকের বাড়ি পশ্চাদপদ জেলা কুড়িগ্রামে তাই! কিন্তু এ লেখক মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। সাহিত্যে গোটা পৃথিবিতে বাংলাদেশের ও বাংলা ভাষার মর্যাদা উচ্চ আসনে বসিয়েছেন। তারপরও কেন এতো অবহেলা তা আমাদেরকে পীড়া দেয়।
কথা সাহিত্যিক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মারা গেলে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের পাশে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস চত্বরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। প্রতিদিন তার ভক্তরা আসে এ সমাধিস্থল পরিদর্শনে। এ কমপ্লেক্স নির্মিত হলে কুড়িগ্রামের পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে।